আমাদের সম্পর্কে
আসসালামু আলাইকুম
সম্মানিত অভিভাবক, আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আল-কুরআনের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত হল- ‘পড়! তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ অর্থাৎ ইসলামে জ্ঞান অর্জন করতে আদেশ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য (কুরআনের) জ্ঞান অর্জন করা ফরজ (ইবনে মাজাহ)।’ আবার সূরা আর-রহমানের ১, ২ ও ৩ নং আয়াতে আল্লাহ (সুবা.) বলেন, ‘তিনি দয়াময়! কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন।’ অর্থাৎ প্রথমে এসেছে কুরআন শিক্ষা এবং পরে এসেছে মানব সৃষ্টির কথা। অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী হওয়ার মাধ্যমেই একজন মানুষ প্রকৃত মানবিক গুণসম্পন্ন ও আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে পারে। রসুল (স.) আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে নিজে কুরআন শেখে ও অন্যকে শেখায় (বুখারি)।’ অন্যত্র রসুল (স.) বলেন, ‘কুরআন (প্রত্যেকের জন্য) সুপারিশকারী হবে, হয় তোমার পক্ষে অথবা তোমার বিপক্ষে (মুসলিম)।’ সূরা ত্ব-হা এর ১২৪, ১২৫ ও ১২৬ নং আয়াতে আল্লাহ্ (সুবা.) বলেন, ‘এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উঠাব। সে বলবেঃ “হে আমার রব, আমাকে কেন অন্ধ করে তুললেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।” আল্লাহ বলবেন: “এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।” অর্থাৎ কুরআনের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য উপরের আয়াত এবং সহীহ হাদিসগুলো বিশ্লেষণ করাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। যদিও এর স্বপক্ষে আরো অসংখ্য কুরআনের আয়াত এবং সহীহ হাদিস রয়েছে।
তবে এর মানে এই নয় যে, অন্যান্য জ্ঞান অর্জন করা হারাম। শুধুমাত্র হারাম কাজের সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞান অর্জন ব্যতীত সকল জ্ঞান অর্জনই বৈধ, যদি তা কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পরে বা একই সাথে হয়। তবে কুরআনের জ্ঞান অর্জনকে বাদ দিয়ে নয়। সুতরাং একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো-প্রথমে তিনি তার সন্তানকে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দিবেন এবং তারপর বা একই সাথে অন্যান্য সকল বৈধ জ্ঞানও দিবেন। কোন পিতা-মাতা যদি এ কাজ না করেন, তবে কিয়ামতের সেই কঠিন মুহুর্তে তাদের অবশ্যই বিপদের মুখে পড়তে হবে। রসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে (জিজ্ঞাসিত হবে)। প্রতিটি সন্তান তার পিতা-মাতার অধীনে থাকে অর্থাৎ সন্তানের ক্ষেত্রে পিতা- মাতা দায়িত্বশীল। আর কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা যেহেতু ফরজ, আর তাই প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার জন্য ফরজ দায়িত্ব হল- সন্তানকে কুরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী করা। আর কোন পিতা-মাতা যদি এই ফরজ দায়িত্ব পালন না করেন, আর সে কারণে যদি ঐ সন্তানের জন্য জাহান্নাম নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, যেসব জীন ও মানুষ আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয় (সূরা হা-মীম সিজদাহ ২৯)।’ আল্লাহ (সুবা.) আমাদেরকে ঐ রকম বিপদ হতে রক্ষা করুন।
তাই আমরা যারা নিজেরা কুরআনের শিক্ষা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি, আসুন নিজ সন্তানদেরকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কুরআনের শিক্ষা দিয়ে ওভাবে অপমানিত হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করি। ‘স্কুল অভ দা হলি কুরআন’ আপনাদেরকে সেরকম একটি সুযোগই করে দিয়েছে।
আবার আমাদের মৃত্যুর পর নেকি অর্জনের তিনটি মাত্র পথ খোলা থাকবে। তার মধ্যে একটি হল নেক সন্তান। আসুন আমাদের সন্তানদেরকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কুরআন শিক্ষা দিয়ে নেক সন্তান গঠনে ব্রতী হই। আল্লাহ আমাদের এই প্রচেষ্টা কবুল করুন।
আমীন।
মোহাম্মদ মোস্তফা আল-মাদানী
প্রিন্সিপাল,
স্কুল অভ দা হলি কুরআন